হরিতকী আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তোমায় ভিনসেন্ট!

Jul 30, 2023
Horitoki
হরিতকী আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তোমায় ভিনসেন্ট!

মৃত্যু যার আমৃত্যুর ইতিহাস?️ 

?হরিতকীর এ পোষাকগুলো তো অনেকেই কিনেছেন বা কিনছেন কিন্তু এর ইতিহাস বা আদ্যোপান্ত জানেন কি? 

আজ ২৯ জুলাই ২০২৩!

জন্মদিন সবার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু একজনের জীবনে মৃত্যুদিন টা যেন জন্মদিনের চেয়েও অধিকতর স্বরনীয়! ১৩৩ বছর আগে আজকের দিনেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। 

তিনি আর কেউ নন, 'দ্যা স্ট্যারি নাইট' শীর্ষক বিশ্ববিখ্যাত পেইন্টিং এর স্রষ্টা ডাচ পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী 'ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গগ', যিনি ১৮৫৩ সালে নেদারল্যান্ডস এ জন্মগ্রহন করে ১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই সকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফ্রান্সে নিজকক্ষে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুবরন করেন। সেই মৃত্যু রহস্যের জাল আজো উন্মোচিত হয়নি, যে সেটা হত্যা ছিল নাকি আত্মহত্যা? তবে অধিকাংশের মতে তিনি নিজেই বন্ধুক দিয়ে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন ২৭-এ জুলাই, কিন্তু মরদেহ উদ্ধার হয় বা সবাই জানতে পারে ২৯ জুলাই সকালে। সেকারনে তার প্রয়ান দিবস ২৯ জুলাই পালিত হয়।

 জীবদ্দশায় ভ্যান গগ বা তার শিল্পকর্ম প্রাপ্ত সম্মান না পেলেও তার এই রহস্যজনক মৃত্যুর পর বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীতে ভ্যান গগ ও তার বন্ধুসুলভ ছোটভাই থিও ভ্যান গগের মাঝে ১৮৭২ সাল থেকে যে চিঠি বিনিময় হতো সেই চিঠিগুলো ১৯১৪ সালে জোহান্না ভ্যান গগ পত্রিকায় প্রকাশ করেন অনুবাদ করে এবং এই অল্প বয়সী চিত্রশিল্পীর মৃত্যু ও জীবনের নানান কাহিনীতে ব্যথিত হয় বিশ্ববাসী। পরবর্তীতে জোহান্নার সহযোগিতার ঋন নিয়ে ভ্যান গগের চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয় এবং বিশাল মূল্যে সেগুলো অকশনে বিক্রি হয় যার বেশিরভাগই ব্রিটিশ এবং আমেরিকার কালেক্টর রা সংগ্রহ করেন। ভ্যান গগের খ্যাতি ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া ও জার্মানি থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তার খ্যাতি চরম পর্যায়ে পৌছায় যখন বিশ্ববিখ্যাত জীবনী লেখক ইর্ভিং স্টোন ১৯৩৪ সালে 'লাস্ট ফর লাইফ' নামে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের একটা জীবনীগ্রন্থ প্রকাশ করেন থিও এবং ভিনসেন্ট এর চিঠিগুলোর উপর ভিত্তি করে। একই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৬ সালে একই নামে একটি সিনেমা নির্মিত হয় এবং বিশ্ববাসীর কাছে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের খ্যাতির চরম প্রসার ঘটে যে কারনে আজ আমরা সবাই ভিনসেন্ট ভ্যান গগ ও তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে জানি, পছন্দ করি আর ভালবাসি। 



ভিনসেন্ট ছিলেন মূলত পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট চিত্রশিল্পী যার সুবিখ্যাত কাজগুলো হলঃ দ্যা স্ট্যারি নাইট, ভ্যান গগ সেল্ফ পোর্ট্রেট, দ্যা পটেটো ইটার্স, এমন্ড ব্লোসমস, দ্যা নাইট ক্যাফে, দ্যা বেড রুম, সানফ্লাওয়ারস, স্ট্যারি নাইট ওভার দ্যা রোন, ভেস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ারস ইত্যাদি। চিত্রশিল্প জগতে ঘটে যায় এক অমর বিপ্লব। চিত্রশিল্পের বিপ্লব বিংশ শতাব্দীতে ঘটানোর পর ভিনসেন্টের কাজ দ্বারা আরেক বিপ্লব আসে একবিংশ শতাব্দীতে ফ্যাশন জগতে। তার দ্যা স্ট্যারি নাইট, এমন্ড ব্লোসম, সানফ্লাওয়ার, পোর্ট্রেট সিরিজের কাজগুলো ফ্যাশন জগতে নিয়ে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন ফ্যাশন ডিজাইনরা, যা প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। তার চিত্রকর্মগুলো হাতে একে, প্রিন্ট করে, সেলাই করে, এমব্রয়ডারির মাধ্যমে, এপ্লিক দিয়ে নানা মাধ্যমে ফ্যশন জগতে প্রবেশ করে আর বিশ্বজুরে ঘটে যায় এক নান্দনিক ও শৈল্পিক ফ্যাশন বিপ্লব। জায়গা পায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকমারি পোষাক থেকে শুরু করে লাইফস্টাইলের সাথে প্রাসঙ্গিক সকল পন্যে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নামি-দামি ব্রান্ডের পন্যে শোভা পায় ভিনসেন্টের নাম, তার চিত্রকর্মের মাধ্যমে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সেই ট্রেন্ডি হাওয়া বইতে শুরু করে এবং বাংলার ফ্যাশন জগতে শোভা পায় সকলের প্রিয় ভিনসেন্ট এর চিত্রকর্ম গুলো বিশেষ করে দ্যা স্ট্যারি নাইট। বাংলার পোষাক যেমন হাতের চুড়ি বা ব্রেসলেট থেকে চোখের চশমা, শাড়ি, কামিজ, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কুর্তি, টাই, স্যুট, শাল, ওড়না, টুপি, ব্যাগ, ঘড়ি, শার্ট, টিশার্ট, প্যান্ট, পালাজো, পাজামা, ধুতি, টপস, ঘাঘরা থেকে লুঙ্গিতেও দেখা মিলছে ভিনসেন্ট এর দ্যা স্ট্যারি নাইট শিল্পকর্মের। এক বিশেষ ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে মানুষের শিল্পের প্রতি ভাললাগা ও ভালবাসার জায়গা থেকে। জীবদ্দশায় যে মানুষটা নামমাত্র মূল্যে ছবি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তার মৃত্যুর পর থেকে আজ একবিংশ শতাব্দীতেও তাঁর তার কাজের কত কদর দিচ্ছে মানুষ যার মূল্য কোন অংকে মেলানো সম্ভব না। হরিতকী আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে তোমায় ভিনসেন্ট! 

লেখা: ✍️ অনিক কুন্ডু 

পোষাক:  হরিতকী